বর্ষণমূখর একদিনে
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৮:৪৯ সকাল
[গতরাত থেকেই প্রচন্ড বৃষ্টি। এই বৃষ্টি নিয়ে নিজের কিছু অনুভূতিকে প্রকাশ করছি।]
বর্ষণমূখর একদিনে
একদিন...ভিন্ন দুই শহরে আমরা দুজন,
সেল ফোনের ভিতর দিয়ে প্রচণ্ড এক বর্ষায়
কথা হয়।
' এই মাত্র প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভিজে এলাম।
অর্ধনগ্ন শরীরে অফিস রুমে একা বসে আছি!'
শুনে তুমি বললে,
- বৃষ্টি এখানেও তুমুল!
' তুমি থাকলে তোমায় নিয়ে ভিজতে যেতাম,
অনেকদিনের তোমার শখ বৃষ্টিতে ছবি তোলার ,
তাও পূরণ হতো। আচ্ছা ভিজতে কেমন লাগে তোমার?
- দারুন! কি যে প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে! বাট সিচুয়েশন
অ্যালাউ করছে না।
'হ্যা, আমাদের এক সাথে ভেজাটা কখনোই
সিচুয়েশন অ্যালাউ করবে না, তাই না?
আমার সাথে আমি একা ভিজবো... কল্পনায় তুমি
আর তোমায় নিয়ে তুমি ভিজবে... কল্পনায় নেই আমি।
অন্য কারো হাত ধরে তুমি হেঁটে যাচ্ছ ,
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ছিটের হৃদয়ে উষ্ণতার জোগান দেয়া-
ভেবে ভেবে কত শীতল ক্রোধে আগুন হয়েছি, তুমি জানো?
- বৃষ্টিতে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়
আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে! জীবনটা এমন কেন?
' আমারও কি তোমায় ছাড়া বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে?
তুমিহীন বেঁচে থাকা! কোনো মানে আছে বলো? তবে
বৃষ্টি মানুষের মন রঙিন করে কেন জানি!
অথচ সে নিজে রংহীন... ধুষর... বিবর্ণ।'
- আমার এখানে বৃষ্টি একেবারেই রংহীন নয়,
কাক চক্ষুর মতো স্বচ্ছ আর পরিষ্কার এর জল!
' ঠিক তোমার হৃদয়ের মতো স্বচ্ছ?
আর আমি কালো হৃদয় নিয়ে, বৃষ্টির মতো
আজীবন ভিজিয়েছি হাজারো শুভ্র হৃদয়!
তবুও তৃষিত চাতকের মতো
একা একা... ঠিক যেন স্রষ্ঠার মতো,
সবাইকে সাথে নিয়েও একদম একা!
-জানো আমার সেই রেললাইনটা টিপটিপ বৃষ্টিতে
ভিজে ভিজে এতো অপূর্ব সুন্দর দেখায়!
আর মুষলধারে যখন শুরু হয়, ঠিক যেন
সহস্র মৌমাছি এক সাথে গেয়ে উঠে-
আর শুন্যতায় ডুবে যেতে যেতে তখন
এ হৃদয় কাউকে খুঁজে ফেরে,
দেখতে সে ঠিক তোমারি মতন!
' তোমার রেললাইনে একদিন আমায় নিয়ে যাবে?
প্রচন্ড বরষায় তুমি আমি আর সেই রেললাইন!
ওর ভেজা শরীর উপভোগ করব দুজনায়,
তোমায় একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করবে আমার!
তোমার ভেজা শরীর... উষ্ণ হয়ে উঠা আমি
আর মাঝখানে সেই রেললাইন! যেন একটা দেয়াল-
ওপারে তুমি
এ পারে আমি
আর মাঝে অসীম পানে ধাবমান দুটি লোহার পাত।
- সবুজের যে কতগুলো শেড হয়
চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
সব সবুজে সবুজে একাকার! তাতে
আরো প্রান রস ঢেলে দেয় বৃষ্টিরা এসে!
তবে সে কীভাবে রংহীন হলো?
' হ্যা, অনেক কিছুই তো দেখেও বিশ্বাস হতে চায়না।
এই যেমন তুমি! তোমাকে যেমন দেখায়
আসলেই কি তুমি তেমন? সেভাবে
সবুজের শেডগুলোও আসলে কিছুই না।
দৃষ্টিভ্রম... যেভাবে তুমি আমার পাশে পাশে...
অথচ যেন তুমি নও-
আমিও তোমার সাথে থেকে থেকে কেন হয়ে উঠি
সেই লোকটির মতো! যে একদিন অদৃশ্য হয়েছিল
তোমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কিছু
সাদা হয়ে উঠা কাশফুল? যার ভিতরে
শুভ্রতা বলতে আসলে কিছুই ছিল না।'
- তাই যদি হয় তো এমন
দৃষ্টিভ্রম বারবার আসুক।
' এইমাত্র বৃষ্টি থেমে গেছে
চলে গেছে সে মেঘবালিকাদের হৃদয়গভীরে!
মৌমাছিরা সব ফিরে গেছে যার যার নীড়ে।
কখনো এক না হওয়া দুটি লোহার পাত ধরে,
হেঁটে চলেছি আমি আর তুমি অজানা কোনো অরন্যনীড়ে।
বুকের ভিতরে তোমায় পাবার এক
অদম্য বাসনায় পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হই,
কখনো মনে হয় আমি সাথিহারা ভূবন চিল...
কিংবা একা একা নৃত্যরত পুরুষ ময়ুর।
ওপারে ঠিকই তুমি রয়ে গেছ সেই
সবসময়ের মতো একই-
চিরচেনা পাশের বাসার মেয়েটির মতই
কাছে থেকে দূরে সরে আবার কাছে আসা!
তবুও... যেন কত অচেনা!!
বিষয়: সাহিত্য
১০৯৫ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"আমার সাথে আমি একা ভিজবো...কল্পনায় তুমি,
আর তোমায় নিয়ে তুমি ভিজবে...কল্পনায় নেই আমি।"
ছন্নছাড়া জীবনে অনুভূতির কাব্যিকতা দূরে চলে গেছে যেন,বুঝের দৈন্যতাই দায়ী এর জন্য।পড়তে মজা পেলাম ।
কবিতার স্বপ্নীল ভূবনে অভিনন্দিত স্বাগতম জানাচ্ছি...
আপনার মন্তব্য আমাকে দেখি কত দূরে নিয়ে যেতে পারে এ লাইনে।
আপনার জন্য রইলো বৃষ্টিভেজা কদমের শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমি মাঝে মাঝে এমন করি। ক্যাম্পাসের সোজা রাস্তাটা দিয়ে তুমুল বর্ষার ভিতর দিয়ে একাকী হেঁটে যাই... আশেপাশে কেউ নেই... শুধু আমি আর বৃষ্টিকণা..আর ওদের বার বার আমাকে আঘাত করার ফলে উদ্ভুত শব্দ.. এই রে, আবারো মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি লেখার ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিলাম। এই মাত্র একটি প্লট ঢুকে গেলো মাথায়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সবসময়ের মতো একই-
চিরচেনা পাশের বাসার মেয়েটির মতই
কাছে থেকে দূরে সরে আবার কাছে আসা!
তবুও... যেন কত অচেনা!!
আপনি নিজে একজন কবি, তাই লেখাটির ব্যাপারে আপনার মন্তব্য আমার কাছে অনেক বড় কিছু অর্থবহন করে।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার পরামর্শ মেনে চল্বো ইনশা আল্লাহ।
তবে রেইনকোট পড়ে ভিজলে নিশ্চয়ই সমস্যা নেই?
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।
ধন্যবাদ অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন